নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::
পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের পর্যটন রাজধানীর বেলাভূমি কক্সবাজারে ২০১৯ সালে বেড়াতে এসেছেন দেশী- বিদেশী ১ কোটি ৪৪ লাখ পর্যটক। বর্তমানে শৈত্য প্রবাহ ও বৃষ্টির কারণে পর্যটক সংখ্যা কম হলেও এটি কেটে গেলে আবার নামবে পর্যটকের ঢল। এখনো সীমিত সংখ্যক পর্যটকেরা আসছেন। নতুন বছরের পুরো শীত মৌসুমে এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
সাম্প্রতিক সময়ে আসা পর্যটকদের আগমন থেকে হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস মালিক এবং রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের দাবি, বিপুলসংখ্যক পর্যটক ঘিরে পর্যটন খাতে ব্যবসা হয়েছে তাদের কমপক্ষে এক বছরে ১ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। এখান থেকে সরকারী কোষাগারে আয়কর জমা পড়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। বিশেষ করে হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস, রেস্ট হাউস এবং রেস্তোরাঁর মালিকরা লাভবান হয়েছেন বেশী।
একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। শুধুমাত্র কক্সবাজার শহর ও পাশ্ববর্তী পর্যটন স্পটে অনুসন্ধান করে এ জরিপ চালানো হয়। সেন্টমার্টিন, ডুলাহাজারা সাফারিপার্ক ও মহেশখালী দ্বীপের আদিনাথ মন্দির এ জরিপের আওতামুক্ত ছিল।
কক্সবাজার কাস্টমস আয়কর ও ভ্যাট কর্তৃপক্ষ জানায়, কক্সবাজার নগরীর ব্যবসায়ীরা টার্গেট অতিক্রম করেছেন বিদায়ী বছরের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে। আর ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ কোটি ৪৪ লাখ পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণ করেছেন। তবে গেল বছর বিদেশি পর্যটক ছিল অন্যান্য বছরের ন্যয় কম। দেশের রাজনীতিতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছিল বিধায়, দেশীয় পর্যটকের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। এদিকে শহরে ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিদ্যমান প্রায় সাড়ে ৬০০ হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস, রেস্ট হাউস এবং কটেজ সমূহে কমবেশি সারা বছরই পর্যটক ছিল। পর্যটন ব্যবসায়ীদের বছর জুড়ে এ ধরনের চাঙাভাব অতীতের কোন সময় দেখা যায়নি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন চকরিয়া নিউজকে বলেন,পর্যটকদের নিরাপত্তায় সবসময় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন দিবারাত্রি সতর্ক অবস্থায় থাকেন। যে কারণে গেল বছর পর্যটক হয়রানি ছিনতাই অপহরণের মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। আগামীতে কক্সবাজারকে পর্যটন রাজধানী ঘোষণা করার সচল প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সরকার এগিয়ে যাচ্ছে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত বছর জানুয়ারিতে পর্যটন শিল্পে ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ১৫০ কোটি টাকা, মার্চ মাসে ১০০ কোটি টাকা, এপ্রিলে ৫০ কোটি টাকা, মে মাসে ৪০ কোটি টাকা, জুন মাসে ৩০ কোটি টাকা, জুলাই মাসে ২০ কোটি, আগস্ট মাসে ২৫ কোটি, সেপ্টেম্বর মাসে ৪৫ কোটি, অক্টোবরে ৮০ কোটি, নভেম্বরে ১০০ কোটি ও ডিসেম্বরে ৩০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। তবে এ জরিপ শুধুমাত্র হোটেল, রেস্তোরাঁ, বার্মিজ মার্কেট, শামুক- ঝিনুক ব্যবসায়ীদের ওপর চালানো হয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে সৈকত পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই বিজিবি র্যাবসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন ভরা মৌসুমে বাড়তি নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে পর্যটকদের নিরাপত্তা বিধান করা হয়। সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, কলাতলীর হিমছড়ি দরিয়ানগর ও ইনানী বীচে বর্তমান সময়ে সকাল সন্ধ্যা লাখো পর্যটকের আনাগোনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারকা মানের হোটেল সী-গাল, ওশান প্যারাডাইস, প্রাসাদ প্যারাডাইস, সায়মন, সী- প্যালেস,লংবীচ ও সী- ক্রাউন হোটেলে চলতি মাসে কোন রুম খালি নেই।
ব্যবসায়ীরা আশা প্রকাশ করেন, চলতি বছর রাজনৈতিক পরিবেশ শান্ত থাকলে গেল বছরের চাইতে বেশী পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণ করবেন বলে পর্যটন শিল্প উদ্ব্যোক্তারা আশা ব্যক্ত করেন।
পাঠকের মতামত: